জন্ম ও পরিচয় : তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই ফেব্রুয়ারি বরিশাল জলার বাবুগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত বহেরচর-ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল জব্বার খান।
শিক্ষাজীবন : তিনি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ (সম্মান) এবং এমএ পাস করেন।
কর্মজীবন : কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। তারপর বাংলাদেশ সরকারের সচিব, ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি ও পানি-সম্পদ | মন্ত্রী, ১৯৮৪-তে আমেরিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, FAO -এর পরিচালক এবং এখানে থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্যকর্ম : আমি কিংবদন্তির কথা বলছি, কখনো রং কখনো সুর, সহিষ্ণু প্রতীক্ষা, কমলের চোখ, বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, আমার সময়, আমার সকল কথা, Rural Development problems and prospects, Creative Development, Food and Faith, Yellow sands' Hills; China Through Chinese Eyes প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম।
পুরস্কার : রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং এই বিষয়ক সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মৃত্যু : ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা 🔒ব্যাখ্যা
সুপুরুষ ভালবাসার সুকণ্ঠ সংগীত কবিতা
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা
রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।
আমরা কি তাঁর মত কবিতার কথা বলতে পারবো
আমরা কি তাঁর মত স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো । 🔒ব্যাখ্যা [সংক্ষেপিত]
পাঠ-পরিচিতি
কবিতাটি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ্ বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা। রচনাটি বিষয় ও আঙ্গিকগত অভিনবত্ব রয়েছে। আলোচ্য কবিতাটিতে উচ্চারিত হয়েছে ঐতিহ্যসচেতন শিকড়সন্ধানী মানুষের সর্বাঙ্গীণ মুক্তির দৃপ্ত ঘোষণা। প্রকৃতপক্ষে, রচনার প্রেক্ষাপটে আছে বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ইতিহাস, এই জাতির সংগ্রাম বিজয় ও মানবিক উদ্ভাসনের অনিন্দ্য অনুষঙ্গসমূহ। তিনি এই কবিতায় পৌনঃপুনিকভাবে মানবমুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সোচ্চার হন। কবির একান্ত প্রত্যাশিত মুক্তির প্রতীক হয়ে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তাঁর বক্তব্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেন। কবির বর্ণিত এই ইতিহাস মাটির কাছাকাছি মানুষের ইতিহাস; বাংলার ভূমিজীবী অনার্য ক্রীতদাসের লড়াই করে টিকে থাকার ইতিহাস। ‘কবিতা‘ ও সত্যের অভেদকল্পনার মধ্য দিয়ে কবি নিয়ে আসেন মায়ের কথা, বোনের কথা, ভাইয়ের কথা, পরিবারের কথা। কবি এ-ও জানেন মুক্তির পূর্বশর্ত যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে পরিবার থেকে দূরে সরে যেতে হয়। ভালোবাসার জন্য, তাদের মুক্ত করবার জন্যই তাদের ছেড়ে যেতে হয়। এই অমোঘ সত্য কবি জেনেছেন আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস থেকে। কবিতাটির রসোপলব্ধির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এর আঙ্গিক বিবেচনা। এক্ষেত্রে, প্রথমেই যে বিষয়টি পাঠককে নাড়া দেয় তা হলো একই ধাঁচের বাক্যের বারংবার ব্যবহার। কবি একদিকে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ পঙক্তিটি বারংবার প্রয়োগ করেছেন, অপরদিকে ‘যে কবিতা শুনতে জানে না/সে...’ কাঠামোর পঙক্তিমালার ধারাবাহিক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে কবিতা আর মুক্তির আবেগকে তিনি একত্রে শিল্পরূপ প্রদান করেছেন। এখানে কিংবদন্তি শব্দবন্ধটি হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যের প্রতীক। কবি এই নান্দনিক কৌশলের সঙ্গে সমন্বিত করেছেন গভীরতাসঞ্চারী চিত্রকল্প। একটি কবিতার শিল্পসার্থক হয়ে ওঠার পূর্বশর্ত হলো হৃদয়স্পর্শী চিত্রকল্পের যথোপযুক্ত ব্যবহার। চিত্রকল্প হলো এমন শব্দছবি যা কবি গড়ে তোলেন এক ইন্দ্রিয়ের কাজ অন্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে করিয়ে কিংবা একাধিক ইন্দ্রিয়ের সম্মিলিত আশ্রয়ে, আর তা পাঠক-হৃদয়ে সংবেদনা জাগায় ইন্দ্রিয়াতীত বোধের প্রকাশসূত্রে। চিত্রকল্প নির্মাণের আরেকটি শর্ত হলো অভিনবত্ব। এ সকল মৌল শর্ত পূরণ করেই আলোচ্য ইন্দ্রিয় থেকে ইন্দ্রিয়াতীতের দ্যোতনাই সঞ্চারিত হয়। নিবিড় পরিশ্রমে কৃষকের ফলানো শস্য একান্তই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য একটি অনুষঙ্গ। কিন্তু এর সঙ্গে যখন কবিতাকে অভেদ কল্পনা করা হয় তখন কেবল ইন্দ্রিয় দিয়ে একে অনুধাবন করা সম্ভব হয় না। সার্বিক বিবেচনায় কবিতাটি বিষয় ও আঙ্গিকের সৌন্দর্যে বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সংযোজন। কবিতাটি গদ্যছন্দে রচিত। প্রচলিত ছন্দের বাইরে গিয়ে এটি প্রাকৃতিক তথা স্বাভাবিক ছন্দ।
উত্তর : বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচারের ইতিহাস ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে বলেছেন। শত্রু রা আমাদের পূর্বপুরুষের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন করেছিল তা এখনো তাজা রয়েছে বোঝাতেই রক্তজবার প্রসঙ্গ ব্যবহৃত হয়েছে। পরাধীনতার কারণে পূর্বপুরুষদের ওপর বারবার অমানুষিক অত্যাচার নেমে এসেছে। বিদেশি শত্রু রা আমাদের সাথে ক্রীতদাসের মতো আচারণ করেছে পূর্বপুরুষদের পরাধীনতা ও তাদের সেই অত্যাচারের মাত্রা বোঝাতেই আলোচ্য চরণটির অবতারণা করা হয়েছে।
উত্তর : ‘তার পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল’- চরণটির মাধ্যমে কবি যুগ যুগ ধরে বিদেশি শাসকদের অত্যাচার –নির্যাতন সহ্য করে বাঙালি জাতির ক্ষতবিক্ষত হওয়াকে বুঝিয়েছেন।
‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি তাঁর পূর্বপুরুষদের নানাভাবে নির্যাতিত হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি তাঁর পূর্বপুরুষের কৃষিভিত্তিক জীবন, বিদেশি শত্রু-শাসকদের অধীনে দাসত্বের যন্ত্রণা, তাদের আঘাতের ক্ষতচিহ্ন এবং তা থেকে উত্তরণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। বাঙালির ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষাপট স্মরণ করতে গিয়ে কবিত মনে হয়েছে শত্রুরা তাঁর পূর্বপুরুষের ওপর পেছন থেকে আঘাত করেছিল। ফলে তাঁদের পিঠে রক্জবার মতো ক্ষত চিহ্ন বিদ্যমান।
উত্তর : ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় ‘বিচলিত স্নেহ’ বলতে আপনজনের উৎকন্ঠা বোঝানো হয়েছে।
কেউ সামান্য বিপদে পড়লে আপনজনের উৎকন্ঠাকে স্মরণ করেন, যা এদেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বজনদের মধ্যে অসংখ্যাবার প্রকাশ পেয়েছে। আজ সেসব ইতিহাস। কিন্তু তাঁদের সেই দিনের উৎকন্ঠা, আশঙ্কা, উদ্বিগ্নতা, অপত্যস্নেহ, ভালোবাসা আজও কবিকে আবেগতাড়িত করে। ‘বিচলিত স্নেহ’ বলতে এটাই বোঝানো হয়েছে।
উত্তর : ‘ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়’ বলতে কবি পরিবারকে ভালোবেসে পারিবারিক গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকলে কবির মাতৃসম স্বদেশের ওপর যে নির্মমতা নেমে আসে সেই বিষয়টি বুঝিয়েছেন।
মা ও মাতৃভূমি এক সূত্রে গাঁথা মাকে ভালোবেসে পরিবারের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকলে দেশরক্ষা হয় না। দেশকে শত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা করতে হলে প্রিয়জনের প্রতি স্নেহ-মায়া, ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। তা না হলে দেশমাতাকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করা যায় না। সে মৃত্যুপথের যাত্রী হয়ে যায়।
উত্তর : আমাদের পূর্বপুরুষের উপর সংঘটিত অত্যাচারের স্বরূপ বোঝাতে আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে বলেছেন। পরাধীনতার কারণে পূর্বপুরুষদের ওপর বারবার অমানুষিক অত্যাচার নেমে এসেছে । বিদেশি শত্রুরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ক্রীতদাস পরিণত করে এবং তাদের সাথে নির্মম আচরণ করে। আর তাই, পূর্বপুরুষদের ওপর তাদের অত্যাচারের মাত্রা বোঝাতেই আলোচ্য চরণটির ব্যবহার করা হয়েছে।
উত্তর : আমাদের বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষের ইতিহাস, শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস। আর সেই পূর্বপুরুষের শৌর্য-বীর্য তুলে ধরতে কবি প্রশ্নোক্ত চরণটি ব্যবহার করেছেন।
বাঙালি জাতির ইতিহাস গৌরবময় ইতিহাস। এক সময় বাংলা অঞ্চলের অধিবাসীরা অধ্যবসায়ী ও সাহসী ছিলেন। তাঁরা যা করতেন নিজের চেষ্টায় করতেন। তাঁরা নিজের চেষ্টায় অনেক সাফল্য লাভ করেছিলেন। যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা ও বীরত্ব তাঁদেরকে সাফল্য এনে দিয়েছিল। এ কারণেই কবি পূর্বপুরুষের কথা বলেছেন।
উত্তর : মাটির সঙ্গে বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষের যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল, সে বিষয়টিই আলোচ্য অংশে তুলে ধরা হয়েছে।
বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষরা পেশায় কৃষিজীবী ছিলেন। মাটির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। পরম মমতায় মাটির বুকে চাষ করতেন, ফসল ফলাতেন। তাঁরা কঠিন মাটির বুকে সোনারূপ ফসল ফলিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পেরেছিলেন। তাঁদের শ্রম কাতরতাবিহীন সংগ্রামী কর্মকাণ্ডই তাঁদের জীবনে সফলতা এনে দিয়েছিল। কবি তাঁর সেই পূর্ব পুরুষদের সোনাফলানো জীবন তথা কৃষিনির্ভর জীবনকে উপস্থাপন করতেই প্রসঙ্গটি ব্যবহার করেছেন।
উত্তর : যুগ যুগ ধরে বিদেশি শাসকদের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে বাঙালি জাতির ক্ষতবিক্ষত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে।
‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় মানুষের উপর অত্যাচারের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেই অত্যাচারের আঘাত যে এখনও তাজা রয়েছে তা বোঝাতেই রক্তজবার প্রসঙ্গ ব্যবহৃত হয়েছে। আরও লক্ষণীয়, আঘাত রয়েছে পিঠে। অর্থাৎ, শত্রুরা ভীরু কাপুরুষের মতো পিছন থেকে আক্রমণ করেছে কিংবা বন্দি ক্রীতদাসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, মুক্ত মানুষের সঙ্গে সম্মুখ লড়াইয়ের বীরোচিত সাহস দেখায়নি।
উত্তর : বাঙালি পূর্বপুরুষদের সংগ্রামী ও সাহসী জীবন চেতনাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে আলোচ্য অংশে।
পূর্বে বাঙালি জাতি খুব পরিশ্রমী ও সাহসী ছিলেন। তাঁরা বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরে বেড়াতেন বনজঙ্গলে, পাহাড়ে-অরণ্যে। সেখান থেকে তাঁরা সংগ্রহ করতেন বিভিন্ন প্রকার ফলমূল ও নানা প্রকার জীবন ধারণের উপকরণ-সামগ্রী। অতিভয়ংকর জঙ্গলার্কীণ পাহাড়কে তাঁরা সাহসের সাথে সহজেই নিজেদের চারণ ক্ষেত্রে পরিণত করতেন। বিপৎসংকুল পাহাড়কেও তাঁরা নিজেদের করতলে নিয়ে নির্বিঘ্নে জীবন ধারণ করতেন। কবি বাঙালির সেই ঐতিহ্যকে স্মরণ করতেই প্রশ্নে উল্লিখিত বিষয়টির অবতারণা করেছেন।
উত্তর : উক্ত উক্তিটি দ্বারা কবি পূর্বপুরুষদের নির্ভীক জীবনযাত্রা তুলে ধরছেন।বর্তমানে বাঙ্গালি জাতির অবস্থা যা হোকনা কেন পূর্বে তাঁরা ছিলেন অনেক সংগ্রামী আর সাহসী। তাঁরা জীবন ধারনের উপকরণ সংগ্রহের জন্য বনে জঙ্গলে পাহাড়ে অরণ্যে নির্ভীকতার সাথে ঘুরে বেড়াতেন নানা হিংস্র প্রাণীকে উপেক্ষা করে। এই ঘুরে বেড়ানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল খাদ্য সংগ্রহ বা জীবন পরিচালনার উপকরণ সামগ্রী সংগ্রহ। তাঁদের সাহস, ঐতিহ্য আর সংগ্রামের দিকটিকেই প্রধান করে তুলে ধরা হয়েছে আলোচ্য অংশে।