অর্ধাঙ্গী

অর্ধাঙ্গী

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন


লেখিকা: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।
জন্ম পরিচয়
জন্ম: ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ, ৯ ডিসেম্বর। জন্মস্থান: পায়রাবন্দ, মিঠাপুকুর, রংপুর।
পিতৃ ও মাতৃ পরিচয়
পিতার নাম: জহিরউদ্দনি আবু আলী হায়দার সাবের।
মাতার নাম: রাহাতুন্নেসা চৌধুরী।
শিক্ষাজীবন
পারিবারিক রক্ষণশীলতার কারণে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করতে পারেন নি। তবে নিজের ঐকান্তিক চেষ্টা এবং বড় ভাই ও স্বামীয় অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় জ্ঞানচর্চায় সাফল্য অর্জন করেন।
কর্মজীবন
বিবাহোত্তর প্রথম জীবনে গৃহিণী। স্বামীর মৃত্যু পর সমাজ সংস্কার এবং নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
সাহিত্যকর্ম
গদ্যগ্রন্থ: মতিচুর, অবরোধবাসিনী।
উপন্যাস:পদ্মরাগ ও সুলতানার স্বপ্ন।
ইংরেজি গ্রন্থ: SULTANA’S DREAM
বিশেষ কৃতিত্ব
তিনি ছিলেন মুসিলম নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি মুসলিম নারীদের সংস্কার ও মুক্তির জন্য তাদেরকে শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত করার মানসে আজীবন ক্ষুরধার সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন ।
জীবনবাসান
মৃত্যু তারিখ: ৯ ডিসেম্বর, ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ।
উৎস পরিচিতি
‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধটি রোকেয়ার ‘মতিচূর’ নামক প্রবন্ধের প্রথম খন্ড থেকে নেয়া হয়েছে।
‘মতিচূর’ প্রবন্ধে মোট প্রবন্ধ সংখ্যা- ৭।
‘মতিচূর’ ১৯০৫ সালে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়।
প্রকাশ কাল
‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধটি ১৩১১ সনের আশ্বিন সংখ্যা ‘নবনূর’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।

মূলপাঠ

কোন রোগীর চিকিৎসা করিতে হইলে প্রথমে রোগের অবস্থা জানা আবশ্যক। 🔒ব্যাখ্যাতাই অবলাজাতির উন্নতির পথ আবিষ্কার করিবার পূর্বে তাহাদের অবনতির চিত্র দেখাইতে হয়। আমি ‘স্ত্রীজাতির অবনতি' শীর্ষক প্রবন্ধে ভগিনীদিগকে জানাইয়াছি যে, আমাদের একটা রোগ আছে—দাসত্ব। সে রোগের কারণ এবং অবস্থা কতক পরিমাণে ইতঃপূর্বে বর্ণনা করা হইয়াছে। এক্ষণে আমরা দেখাইতে চেষ্টা করিব, সেই রোগ হওয়ায় আমাদের সামাজিক অবস্থা কেমন বিকৃত হইয়াছে। ঔষধ পথ্যের বিধান স্থানান্তরে দেওয়া হইবে।


এইখানে গোঁড়া পর্দাপ্রিয় ভগিনীদের অবগতির জন্য দু' একটা কথা বলিয়া রাখা আবশ্যক বোধ করি। আমি অবরোধ প্রথা 🔒ব্যাখ্যাবিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হই নাই। কেহ যদি আমার ‘স্ত্রীজাতির অবনতি' প্রবন্ধে পর্দা-বিদ্বেষ ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য দেখিতে না পান, তবে আমাকে মনে করিতে হইবে আমি নিজের মনোভাব উত্তমরূপে ব্যক্ত করিতে পারি নাই, অথবা তিনি প্রবন্ধটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন নাই ৷


সে প্রবন্ধে প্রায় সমগ্র নারীজাতির উল্লেখ আছে। 🔒ব্যাখ্যাসকল সমাজের মহিলাগণই কি অবরোধে বন্দিনী থাকেন? অথবা তাঁহারা পর্দানশীন নহেন বলিয়া কি আমি তাঁহাদিগকে সম্পূর্ণ উন্নত বলিয়াছি? আমি মানসিক দাসত্বের 🔒ব্যাখ্যা(enslaved মনের) আলোচনা করিয়াছি।


কোন একটা নূতন কাজ করিতে গেলে সমাজ প্রথমত গোলযোগ উপস্থিত করে, এবং পরে সেই নূতন চালচলন সহিয়া লয়, তাহারই দৃষ্টান্তস্বরূপ পার্সি মহিলাদের পরিবর্তিত অবস্থার উল্লেখ করিয়াছি। পূর্বে তাঁহারা ছত্র ব্যবহারেরও অধিকারিণী ছিলেন না, তারপর তাঁহাদের বাড়াবাড়িটা সীমা লঙ্ঘন করিয়াছে, তবু তো পৃথিবী ধ্বংস হয় নাই🔒ব্যাখ্যা এখন পার্সি মহিলাদের পর্দা মোচন হইয়াছে সত্য, কিন্তু মানসিক দাসত্ব মোচন হইয়াছে কি? 🔒ব্যাখ্যাঅবশ্যই হয় নাই। আর ঐ যে পর্দা ছাড়িয়াছেন, তাহা দ্বারা তাঁহাদের স্বকীয় বুদ্ধি-বিবেচনার তো কোন পরিচয় পাওয়া যায় না। পার্সি পুরুষগণ কেবল অন্ধভাবে বিলাতি সভ্যতার অনুকরণ করিতে যাইয়া স্ত্রীদিগকে পর্দার বাহিরে আনিয়াছে,🔒ব্যাখ্যা ইহাতে অবলাদের জীবনীশক্তির তো কিছু পরিচয় পাওয়া যায় না— তাঁহারা যে জড়পদার্থ, সেই জড়পদার্থই আছেন।🔒ব্যাখ্যা পুরুষ যখন তাঁহাদিগকে অন্তঃপুরে রাখিতেন, তাঁহারা তখন সেইখানে থাকিতেন। আবার পুরুষ যখন তাঁহাদের 'নাকের দড়ি' ধরিয়া টানিয়া তাঁহাদিগকে মাঠে বাহির করিয়াছেন, তখনই তাঁহারা পর্দার বাহির হইয়াছেন! ইহাতে রমণীকুলের বাহাদুরি কী? ঐরূপ পর্দা-বিরোধ কখনই প্ৰশংসনীয় নহে।🔒ব্যাখ্যা


কলম্বস যখন আমেরিকা আবিষ্কার করিতে কৃতসংকল্প হন, তখন লোকে তাঁহাকে বাতুল বলে নাই কি? নারী আপন স্বত্ব-স্বামিত্ব বুঝিয়া আপনাকে নরের ন্যায় শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করিতে চাহে, ইহাও বাতুলতা বই আর কী? পুরুষগণ স্ত্রীজাতির প্রতি যতটুকু সম্মান প্রদর্শন করেন, তাহাতে আমরা সম্পূর্ণ তৃপ্ত হইতে পারি না। লোকে কালী, শীতলা প্রভৃতি রাক্ষস প্রকৃতির দেবীকে ভয় করে, পূজা করে, সত্য। কিন্তু সেইরূপ বাঘিনী, নাগিনী, সিংহী প্রভৃতি দেবীও কি ভয় ও পূজা লাভ করে না? তবেই দেখা যায় পূজাটা কে পাইতেছেন— রমণী কালী, না রাক্ষসী নৃমুণ্ডমালিনী?


নারীকে শিক্ষা দিবার জন্য গুরুলোকে সীতা দেবীকে আদর্শরূপে দেখাইয়া থাকেন। সীতা অবশ্যই পর্দানশীন ছিলেন না। তিনি রামচন্দ্রের অর্ধাঙ্গী, রাণী, প্রণয়িনী এবং সহচরী। আর রামচন্দ্র প্রেমিক, ধার্মিক — সবই। কিন্তু রাম সীতার প্রতি যে ব্যবহার করিয়াছেন, তাহাতে প্রকাশ পায় যে, একটি পুতুলের সঙ্গে কোন বালকের যে-সম্বন্ধ, সীতার সঙ্গে রামের সম্বন্ধও প্রায় 🔒ব্যাখ্যাসেইরূপ। বালক ইচ্ছা করিলে পুতুলকে প্রাণপণে ভালবাসিতে পারে; পুতুল হারাইলে বিরহে অধীর হইতে পারে; পুতুলের ভাবনায় অনিদ্রায় রজনী যাপন করিতে পারে; পুতুলটা যে ব্যক্তি চুরি করিয়াছিল, তাহার প্রতি খড়গহস্ত হইতে পারে; হারানো পুতুল ফিরিয়া পাইলে আহলাদে আটখানা হইতে পারে; আবার বিনা কারণে রাগ করিয়াও পুতুলটা কাদায় ফেলিয়া দিতে পারে – কিন্তু পুতুল বালকের কিছুই করিতে পারে না, কারণ, হস্তপদ থাকা সত্ত্বেও পুত্তলিকা অচেতন পদার্থ!🔒ব্যাখ্যা বালক তাহার পুতুল স্বেচ্ছায় অনলে উৎসর্গ করিতে পারে, পুতুল পুড়িয়া গেল দেখিয়া ভূমে লুটাইয়া ধূলি-ধূসরিত হইয়া উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিতে পারে।


রামচন্দ্র ‘স্বামিত্বের’ ষোলো আনা পরিচয় দিয়াছেন!!🔒ব্যাখ্যা আর সীতা? – কেবল প্রভু রামের সহিত বনযাত্রার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়া দেখাইয়াছেন যে, তাঁহারও ইচ্ছা প্রকাশের শক্তি আছে। রাম বেচারা অবোধ বালক, সীতার অনুভব-শক্তি আছে, ইহা তিনি বুঝিতে চাহেন নাই। কেননা, বুঝিয়া কার্য করিতে গেলে স্বামিত্বটা পূর্ণমাত্রায় খাটান যাইত না;– সীতার অমন পবিত্র হৃদয়খানি অবিশ্বাসের পদাঘাতে দলিত ও চূর্ণ করিতে পারা যাইত না।🔒ব্যাখ্যা আচ্ছা, দেশ কালের নিয়মানুসারে কবির ভাষায় সুর মিলাইয়া না হয় মানিয়া লই যে, আমরা স্বামীর দাসী নহি— অর্ধাঙ্গী। আমরা তাঁহাদের গৃহে গৃহিণী, মরণে (না হয়, অন্তত তাঁহাদের চাকুরি উপলক্ষে যথাতথা ) অনুগামিনী, সুখ-দুঃখে সমভাগিনী, ছায়াতুল্য সহচরী ইত্যাদি।কিন্তু কলিযুগে আমাদের ন্যায় অর্ধাঙ্গী লইয়া পুরুষগণ কীরূপ বিকলাঙ্গ হইয়াছেন, তাহা কি কেহ একটু চিন্তাচক্ষে দেখিয়াছেন? আক্ষেপের (অথবা প্রভুদের সৌভাগ্যের) বিষয় যে, আমি চিত্রকর নহি— নতুবা এই নারীরূপ অর্ধাঙ্গ লইয়া তাঁহাদের কেমন অপরূপ মূর্তি হইয়াছে, তাহা আঁকিয়া দেখাইতাম।🔒ব্যাখ্যা


শুক্লকেশ বুদ্ধিমানগণ বলেন যে, আমাদের সাংসারিক জীবনটা দ্বিচক্র শকটের ন্যায়—এ শকটের এক চক্র পতি, অপরটি পত্নী। তাই ইংরেজি ভাষায় কথায় কথায় স্ত্রীকে অংশিনী (partner), উত্তমার্ধ (better half) ইত্যাদি বলে। জীবনের কর্তব্য অতি গুরুতর, সহজ নহে—


“সুকঠিন গার্হস্থ্য ব্যাপার

সুশৃঙ্খলে কে পারে চালাতে?

রাজ্যশাসনের রীতিনীতি

সূক্ষ্মভাবে রয়েছে ইহাতে।”


বোধ হয় এই গার্হস্থ্য ব্যাপারটাকে মন্তকস্বরূপ কল্পনা করিয়া শাস্ত্রকারগণ পতি ও পত্নীকে তাহার অঙ্গস্বরূপ বলিয়াছেন। তবে দেখা যাউক বর্তমান যুগে সমাজের মূর্তিটা কেমন।


মনে করুন, কোন স্থানে পূর্বদিকে একটি বৃহৎ দর্পণ আছে, যাহাতে আপনি আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিতে পারেন।🔒ব্যাখ্যা আপনার দক্ষিণাঙ্গভাগ পুরুষ এবং বামাঙ্গভাগ স্ত্রী। এই দর্পণের সম্মুখে দাঁড়াইয়া দেখুন-


আপনার দক্ষিণ বাহু দীর্ঘ (ত্রিশ ইঞ্চি) এবং স্থূল, বাম বাহু দৈর্ঘ্যে চব্বিশ ইঞ্চি এবং ক্ষীণ। দক্ষিণ চরণ দৈর্ঘ্যে ১২ ইঞ্চি, বাম চরণ অতিশয় ক্ষুদ্র। দক্ষিণ স্কন্ধ উচ্চতায় পাঁচ ফিট, বাম স্কন্ধ উচ্চতায় চারি ফিট ! (তবেই মাথাটা সোজা থাকিতে পারে না, বাম দিকে ঝুঁকিয়া পড়িতেছে। কিন্তু আবার দক্ষিণ কর্ণভারে বিপরীত দিকেও একটু ঝুঁকিয়াছে!) দক্ষিণ কৰ্ণ হস্তিকর্ণের ন্যায় বৃহৎ, বাম কর্ণ রাসভকর্ণের ন্যায় দীর্ঘ! দেখুন!—ভাল করিয়া দেখুন, আপনার মূর্তিটা কেমন!! যদি এ মূর্তিটা অনেকের মনোমত না হয়, তবে দ্বিচক্র শকটের গতি দেখাই। যে শকটের এক চক্র বড় (পতি) এবং এক চক্র ছোট (পত্নী) হয়, সে শকট অধিক দূরে অগ্রসর হইতে পারে না—সে কেবল একই স্থানে (গৃহকোণেই) ঘুরিতে থাকিবে। তাই ভারতবাসী উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে পারিতেছেন না।🔒ব্যাখ্যা


সমাজের বিধি-ব্যবস্থা আমাদিগকে তাহাদের অবস্থা হইতে সম্পূর্ণ পৃথক রাখিয়াছে; তাঁহাদের সুখ-দুঃখ এক প্রকার, আমাদের সুখ-দুঃখ অন্য প্রকার। এস্থলে বাবু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নবদম্পতির প্রেমালাপ' 🔒ব্যাখ্যাকবিতার দুই চারি ছত্র উদ্ধৃত করিতে বাধ্য হইলাম-


“বর। কেন সখি কোণে কাঁদিছ বসিয়া?

কনে। পুষি মেনিটিরে ফেলিয়া এসেছি ঘরে।

বর। কী করিছ বনে কুঞ্জভবনে?

কনে। খেতেছি বসিয়া টোপা কুল। 

* * *

বর। জগৎ ছানিয়া, কী দিব আনিয়া জীবন করি ক্ষয়?

তোমা তরে সখি, বল করিব কী?

কনে। আরো কুল পাড় গোটা ছয় ৷

* * *

বর। বিরহের বেলা কেমনে কাটিবে?

কনে। দেব পুতুলের বিয়ে।”


সুতরাং দেখা যায় কন্যাকে এরূপ শিক্ষা দেওয়া হয় না, যাহাতে সে স্বামীর ছায়াতুল্যা সহচরী হইতে পারে। 🔒ব্যাখ্যাপ্রভুদের বিদ্যার গতির সীমা নাই,🔒ব্যাখ্যা স্ত্রীদের বিদ্যার দৌড় সচরাচর ‘বোধোদয়' পর্যন্ত !🔒ব্যাখ্যা


স্বামী যখন পৃথিবী হইতে সূর্য ও নক্ষত্রের দূরত্ব মাপেন, স্ত্রী তখন একটা বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ্য প্রন্থ (সেলাই করিবার জন্য) মাপেন! স্বামী যখন কল্পনা-সাহায্যে সুদূর আকাশে গ্রহনক্ষত্রমালা-বেষ্টিত সৌরজগতে বিচরণ করেন, সূর্যমণ্ডলের ঘনফল তুলাদণ্ডে ওজন করেন এবং ধূমকেতুর গতি নির্ণয় করেন, স্ত্রী তখন রন্ধনশালায় বিচরণ করেন, চাউল ডাউল ওজন করেন এবং রাঁধুনির গতি নির্ণয় করেন। বলি জ্যোতির্বেত্তা মহাশয়, আপনার পার্শ্বে আপনার সহধর্মিনী কই? বোধ হয়, গৃহিণী যদি আপনার সঙ্গে সূর্যমণ্ডলে যান, তবে তথায় পুঁহুছিবার পূর্বেই পথিমধ্যে উত্তাপে বাষ্পীভূত হইয়া যাইবেন! তবে সেখানে গৃহিণীর না যাওয়াই ভাল !!


অনেকে বলেন, স্ত্রীলোকদের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন নাই। মেয়ে চর্ব্যচোষ্য রাঁধিতে পারে, বিবিধ প্রকার সেলাই করিতে পারে, দুই চারি খানা উপন্যাস পাঠ করিতে পারে, ইহাই যথেষ্ট। আর বেশী আবশ্যক নাই। কিন্তু ডাক্তার বলেন যে আবশ্যক আছে, যেহেতু মাতার দোষ গুণ লইয়া পুত্রগণ ধরাধামে অবতীর্ণ হয়। এইজন্য দেখা যায় যে, আমাদের দেশে অনেক বালক শিক্ষকের বেত্রতাড়নায় কণ্ঠস্থ বিদ্যার জোরে এফ.এ. বি. এ. পাশ হয় বটে; কিন্তু বালকের মনটা তাহার মাতার সহিত রান্নাঘরেই ঘুরিতে থাকে! তাহাদের বিদ্যা পরীক্ষায় এ কথার সত্যতার উপলব্ধি হইতে পারে। আমার জনৈক বন্ধু তাঁহার ছাত্রকে উত্তর-দক্ষিণ প্রভৃতি দিঙনির্ণয়ের কথা (cardinal points) বুঝাইতেছিলেন। শেষে তিনি প্রশ্ন করিলেন, “যদি তোমার দক্ষিণহস্ত পশ্চিমে এবং বাম হস্ত পূর্বে থাকে, তবে তোমার মুখ কোন দিকে হইবে?” উত্তর পাইলেন “আমার পশ্চাৎ দিকে!”

যাঁহারা কন্যার ব্যায়াম করা অনাবশ্যক মনে করেন, তাঁহারা দৌহিত্রকে হৃষ্টপুষ্ট “পাহল-ওয়ান” দেখিতে চাহেন কি না? তাঁহাদের দৌহিত্র ঘুষিটা খাইয়া থাপড়টা মারিতে পারে, এরূপ ইচ্ছা করেন কি না? যদি সেরূপ ইচ্ছা করেন, তবে বোধ হয়, তাঁহারা সুকুমারী গোলাপ-লতিকায় কাঁঠাল ফলাইতে চাহেন!! আর যদি তাঁহারা ইচ্ছা করেন যে দৌহিত্রও বলিষ্ঠ হয়, বরং পয়জার পেটা হইয়া নত মস্তকে উচ্চৈঃস্বরে বলে, “মাৎ মারো! চোট লাগতা হায়!!” এবং পয়জার লাভ শেষ হইলে দূরে গিয়া প্রহারকর্তাকে শাসাইয়া বলে যে, “কায় মারতা থা? হাম নালিশ করেগা!” তাহা হইলে আমি তাঁহাদিগকে আমার বক্তব্য বুঝাইতে অক্ষম। খ্রিষ্টিয়ান সমাজে যদিও স্ত্রীশিক্ষার যথেষ্ট সুবিধা আছে, তবু রমণী আপন স্বত্ব ষোল আনা ভোগ করিতে পায় না। তাহাদের মন দাসত্ব হইতে মুক্তি পায় না। স্বামী ও স্ত্রী কতক পরিমাণে জীবনের পথে পাশাপাশি চলিয়া থাকেন বটে; কিন্তু প্রত্যেক উত্তমার্ধই(better half) তাঁহার অংশীর (partner- এর) জীবনে আপন জীবনে মিলাইয়া তন্ময়ী হইয়া যান না। স্বামী যখন ঋণজালে জড়িত হইয়া ভাবিয়া ভাবিয়া মরমে মরিতেছেন, স্ত্রী তখন একটা নূতন টুপীর (bonnet- এর) চিন্তা করিতেছেন! কারণ তাঁহাকে কেবল মূর্তিমতী কবিতা হইতে শিক্ষা দেওয়া হইয়াছে-তাই তিনি মনোরমা কবিতা সাজিয়া থাকিতে চাহেন। ঋণদায়রূপ গদ্য (prosaic) অবস্থা তিনি বুঝিতে অক্ষম।

এখন মুসলমানসমাজে প্রবেশ করা যাউক। মুসলমানের মতে আমরা পুরুষের “অর্ধেক”, অর্থাৎ দুইজন নারী একজন নরের সমতুল্য। অথবা দুইটি ভ্রাতা ও একটি ভগিনী একত্র হইলে আমরা “আড়াই জন” হই! আপনারা “মহম্মদীয় আইনে” দেখিতে পাইবেন যে বিধান আছে, পৈতৃক সম্পত্তিতে কন্যা পুত্রের অর্ধেক ভাগ পাইবে। এ নিয়মটি কিন্তু পুস্তকেই সীমাবদ্ধ। যদি আপনারা একটু পরিশ্রম স্বীকার করিয়া কোন ধনবান মুসলমানের সম্পত্তি বিভাগ করা দেখেন, কিংবা জমিদারি পরিদর্শন করিতে যান, তবে দেখিবেন কার্যত কন্যার ভাগে শূন্য (০) কিংবা যৎসামান্য পড়িতেছে। আমি এখন অপার্থিব সম্পত্তির কথা বলিব। পিতার স্নেহ, যত্ন ইত্যাদি অপার্থিব সম্পত্তি। এখানেও পক্ষপাতিতার মাত্রা বেশী। ঐ যত্ন, স্নেহ, হিতৈষিতার অর্ধেকেই আমরা পাই কই? যিনি পুত্রের সুশিক্ষার জন্য চারি জন শিক্ষক নিযুক্ত করেন, তিনি কন্যার জন্য দুই জন শিক্ষয়ত্রী নিযুক্ত করেন কি? যেখানে পুত্র তিনটা (বি. এ. পর্যন্ত) পাশ করে, সেখানে কন্যা দেড়টা পাশ (এন্ট্রাস পাশ ও এফ. এ. ফেল) করে কি? পুত্রদের বিদ্যালয়ের সংখ্যা করা যায় না, বালিকাদের বিদ্যালয় সংখ্যায় পাওয়াই যায় না! সে স্থলে ভ্রাতা “শমস-উল-ওলামা” সে স্থলে ভগিনী “নজম-উল-ওলামা” হইয়াছেন কি? তাঁহাদের অন্তঃপুর গগণে অসংখ্য “নজমন্নেসা” “শমসন্নেসা” শোভা পাইতেছেন বটে। কিন্তু আমরা সাহিত্য-গগনে “নজম-উল-ওলামা” দেখিতে চাই!

আমাদের জন্য এ দেশে শিক্ষার বন্দোবস্ত সচরাচর এইরূপ-প্রথমে আরবীয় বর্ণমালা, অতঃপর কুরআন শরীফ পাঠ। কিন্তু শব্দগুলির অর্থ বুঝাইয়া দেওয়া হয় না, কেবল স্মরণশক্তির সাহায্যে টিয়াপাখির মত আবৃত্তি কর। কোন পিতার হিতৈষণার মাত্রা বৃদ্ধি হইলে, তিনি দুহিতাকে “হাফেজা” করিতে চেষ্টা করেন। সমুদয় কুরআনখানি যাঁহার কণ্ঠস্থ থাকে, তিনিই “হাফেজ”। আমাদের আরবী শিক্ষা ঐ পর্যন্ত পারস্য এবং উর্দু শিখিতে হইলে, প্রথমেই “করিমা ববখশা এ বরহালে মা” এবং একেবারে (উর্দু) “বানাতন নাস” পড়! একে আকার ইকার নাই, তাতে আবার আর কোন সহজপাঠ্য পুস্তক পূর্বে পড়া হয় নাই সুতরাং পাঠের গতি দ্রুতগামী হয় না। অনেকের ঐ কয়খানি পুস্তক পাঠ শেষ হওয়ার পূর্বেই কন্যা-জীবন শেষ হয়। বিবাহ হইলে বালিকা ভাবে, “যাহা হোক, পড়া হইতে রক্ষা পাওয়া গেল!” কোন কোন বালিকা রন্ধন ও সূচিকর্মে সুনিপুণা হয়। বঙ্গদেশেও বালিকাদিগকে রীতিমত বঙ্গভাষা শিক্ষা দেওয়া হয় না। কেহ কেহ উর্দু পড়িতে শিখে, কিন্তু কলম ধরিতে শিখে না। ইহাদের উন্নতির চরম সীমা সলমা চুমকির কারুকার্য, উলের জুতা মোজা ইত্যাদি প্রস্তুত করিতে শিক্ষা পর্যন্ত।

যদি ধর্মগুরু মুহম্মদ (দঃ) আপনাদের হিসাব নিকাশ লয়েন যে, “তোমরা কন্যার প্রতি কিরূপ ন্যায় ব্যবহার করিয়াছ?” তবে আপনারা কি বলিবেন?

পয়গম্বরদের ইতিহাসে শুনা যায়, জগতে যখনই মানুষ বেশি অত্যাচার অনাচার করিয়াছে, তখনই এক-এক জন পয়গম্বর আসিয়া দুষ্টের দমন পালন করিয়াছেন। আরবে স্ত্রীজাতির প্রতি অধিক অত্যাচার হইতেছিল; আরববাসিগণ কন্যাহত্যা করিতেছিল তখন হযরত মুহাম্মদ (দঃ) কন্যাকুলের রক্ষকস্বরূপ দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন। তিনি কেবল বিবিধ ব্যবস্থা দিয়াই ক্ষান্ত থাকেন নাই, স্বয়ং কন্যা পালন করিয়া আদর্শ দেখাইয়াছেন। তাঁহার জীবন ফাতেমাময় করিয়া দেখাইয়াছেন-কন্যা কিরূপ আদরণীয়া। সে আদর, সে স্নেহ জগতে অতুল।

আহা! তিনি নাই বলিয়া আমাদের এ দুর্দ্দশা। তবে আইস ভগিনীগণ! আমরা সকলে সমস্বরে বলিঃ

“করিমা ববখশা এ বরহালে মা!” করিম (ঈশ্বর) অবশ্যই কৃপা করিবেন। যেহেতু “সাধনায় সিদ্ধি।” আমরা “করিমের” অনুগ্রহ লাভের জন্য যত করিলে অবশ্যই তাঁহার করুণা লাভ করিব। আমরা ঈশ্বর ও মাতার নিকট ভ্রাতাদের “অর্ধেক” নহি। তাহা হইলে এইরূপ স্বাভাবিক বন্দোবস্ত হইত-পুত্র যেখানে দশ মাস স্থান পাইবে, দুহিতা সেখানে পাঁচ মাস! পুত্রের জন্য যতখানি দুগ্ধ আমদানি হয়, কন্যার জন্য তাহার অর্ধেক! সেরূপ ত নিয়ম নাই! আমরা জননীর স্নেহ মমতা ভ্রাতার সমানই ভোগ করি। মাতৃহৃদয়ে পক্ষপাতিতা নাই। তবে কেমন করিয়া বলিব, ঈশ্বর পক্ষপাতী? তিনি কি মাতা অপেক্ষা অধিক করুণাময় নহেন?

আমি এবার রন্ধন ও সূচিকার্য সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছি, তাহাতে আবার যেন কেহ মনে না করেন যে আমি সূচিকার্য ও রন্ধনশিক্ষার বিরোধী। জীবনের প্রধান প্রয়োজনীয় বস্তু অন্নবস্ত্র; সুতরাং রন্ধন ও সেলাই অবশ্য শিক্ষণীয়। কিন্তু তাই বলিয়া জীবনটাকে শুধু রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নহে।

স্বীকার করি যে, শারীরিক দুর্বলতাবশতঃ নারীজাতি অপর জাতির সাহায্যে নির্ভর করে। তাই বলিয়া পুরুষ “প্রভু” হইতে পারে না। কারণ জগতে দেখিতে পাই, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিকট কোন না কোন প্রকার সাহায্য প্রার্থনা করে, যেন একে অপরের সাহায্যে ব্যতীত চলিতে পারে না। তরুলতা যেমন বৃষ্টির সাহায্য-প্রার্থী, মেঘও আবার নদীর ঋণী। তবে তরঙ্গিনী কাদম্বিনীর “স্বামী’, না কাদম্বিনী তরঙ্গিনী “স্বামী”, এ স্বাভাবিক নিয়মের কথা ছাড়িয়া কেবল সামাজিক নিয়মে দৃষ্টিপাত করিলেও আমরা তাহাই দেখি।


কেহ সূত্রধর, কেহ তন্তুবায় ইত্যাদি। একজন ব্যারিস্টার ডাক্তারের সাহায্যপ্রার্থী, আবার ডাক্তারও ব্যারিস্টারের সাহায্য চাহেন। তবে ডাক্তারকে ব্যারিস্টারের স্বামী বলিব, না ব্যারিস্টার ডাক্তারের স্বামী? যদি ইহাদের কে কাহাকে 'স্বামী' বলিয়া স্বীকার না করেন, তবে শ্রীমতীগণ জীবনের চিরসঙ্গী শ্রীমানদিগকে 'স্বামী' ভাবিবেন কেন?


আমরা উত্তমার্ধ (better halves) তাঁহারা নিকৃষ্টার্ধ (worse halves), আমরা অর্ধাঙ্গী, তাঁহারা অর্ধাঙ্গ অবলার হাতেও সমাজের জীবন মরণের কাঠি আছে🔒ব্যাখ্যা, যেহেতু “না জাগিলে সব ভারত-ললনা” এ ভারত আর জাগিতে পারিবে না। প্রভুদের ভীরুতা কিংবা তেজস্বিতা জননীর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে কেবল শারীরিক বলের দোহাই দিয়া অদূরদর্শী ভ্রাতৃ মহোদয়গণ যেন শ্রেষ্ঠত্বের দাবি না করেন।


আমরা পুরুষের ন্যায় সুশিক্ষা ও অনুশীলনের সম্যক সুবিধা না পাওয়ায় পশ্চাতে পড়িয়া আছি। সমান সুবিধা পাইলে আমরাও কি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করিতে পারিতাম না? আশৈশব আত্মনিন্দা শুনিতেছি, তাই এখন আমরা অন্ধভাবে পুরুষের শ্রেষ্ঠতা স্বীকার করি এবং নিজেকে অতি তুচ্ছ মনে করি। অনেক সময় “হাজার হোক ব্যাটা ছেলে!” বলিয়া ব্যাটা ছেলেদের দোষ ক্ষমা করিয়া অন্যায় প্রশংসা করি। এই তো ভুল।


আমি ভগিনীদের কল্যাণ কামনা করি। তাঁহাদের ধর্মবন্ধন বা সমাজবন্ধন ছিন্ন করিয়া তাঁহাদিগকে একটা উন্মুক্ত প্রান্তরে বাহির করিতে চাহি না। মানসিক উন্নতি করিতে হইলে হিন্দুকে হিন্দুত্ব বা খ্রিষ্টানকে খ্রিষ্টানি ছাড়িতে হইবে এমন কোন কথা নাই। আপন আপন সম্প্রদায়ের পার্থক্য রক্ষা করিয়াও মনটাকে স্বাধীনতা দেওয়া যায়। আমরা যে কেবল উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে অবনত হইয়াছি, তাই বুঝিতে ও বুঝাইতে চাই।

অনেকে হয়তো ভয় পাইয়াছেন যে, বোধ হয় একটা পত্নী-বিদ্রোহের আয়োজন করা হইতেছে। অথবা ললনাগণ দলে দলে উপস্থিত হইয়া বিপক্ষকে রাজকীয় কার্যক্ষেত্র হইতে তাড়াইয়া দিয়া সেই পদগুলি অধিকার করিবেন — শামলা, চোগা, আইন-কানুনের পাঁজি-পুঁথি লুঠিয়া লইবেন! অথবা সদলবলে কৃষিক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া কৃষকগুলিকে তাড়াইয়া দিয়া তাহাদের শস্যক্ষেত্র দখল করিবেন, হাল গরু কাড়িয়া লইবেন, তবে তাঁহাদের অভয় দিয়া বলিতে হইবে– নিশ্চিন্ত থাকুন।


পুরুষগণ আমাদিগকে সুশিক্ষা হইতে পশ্চাদপদ রাখিয়াছেন বলিয়া আমরা অকর্মণ্য হইয়া গিয়াছি। ভারতে ভিক্ষু ও ধনবান—এই দুই দল লোক অলস; এবং ভদ্রমহিলার দল কর্তব্য অপেক্ষা অল্প কাজ করে। আমাদের আরাম-প্রিয়তা খুব বাড়িয়াছে। আমাদের হস্ত, মন, পদ, চক্ষু ইত্যাদির সদ্ব্যবহার করা হয় না। দশজন রমণীরত্ন একত্র হইলে ইহার উহার – বিশেষত আপন আপন অর্ধাঙ্গের নিন্দা কিংবা প্রশংসা করিয়া বাকপটুতা দেখায়। আবশ্যক হইলে কোন্দলও চলে।🔒ব্যাখ্যা আশা করি এখন 'স্বামী'র স্থলে 'অর্ধাঙ্গ' শব্দ প্রচলিত হইবে।🔒ব্যাখ্যা


মূলভাব

বেগম রোকেয়ার ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের গোড়ায় ভারতবর্ষে পুরুষশাসিত সমাজজীবনের সবক্ষেত্রে নারী, বিশেষ করে মুসলমান নারী সমাজের পশ্চাৎপদতা, দুর্বহ জীবন ও অধিকারহীনতাকে দেখানো হয়েছে পুরুষের নিদারুণ স্বার্থপরতা ও আধিপত্যকামী মানসিকতার প্রেক্ষাপটে। অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে বেগম রোকেয়া আবেগধর্মী যুক্তিপ্রধান এই রচনায় নারীসমাজকে জ্ঞানচর্চা ও কর্মব্রত, অধিকার সচেতনতা ও মুক্তি আকাঙ্ক্ষায় আকৃষ্ট করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তিনি দেখাতে চেয়েছেন, সমাজ যে পূর্ণ ও স্বাভাবিক গতিতে অগ্রসর হতে পারছে না তার কারণ পরিবার ও সমাজজীবনের অপরিহার্য অর্ধেক শক্তি নারীসমাজের দুর্বল ও অবনত অবস্থা। এজন্য পুরুষসমাজের দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতাকে দায়ী করেছেন তিনি। এই রচনায় তিনি নারীজাগরণের পক্ষে যে সুচিন্তিত, দৃঢ় ও বলিষ্ঠ মতামত ব্যক্ত করেছেন তাতে তাঁর মন্তব্যে আছে আবেগের গাঢ়তা আর যুক্তিতে আছে তীক্ষ্ণতা। তিনি দেখাতে চেয়েছেন, সমাজজীবনের অগ্রগতি ও কল্যাণসাধনের জন্যে নারীজাগরণ এবং সেই সঙ্গে পুরুষ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। 

উত্তর : ক্রিস্টোফার কলম্বস প্রসিদ্ধ ইতালীয় নাবিক এবং আমেরিকা মহাদেশের আবিষ্কর্তা।

উত্তর : বলহীনা। প্রবন্ধে নারীসমাজ অর্থে ব্যবহৃত


উত্তর : রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

উত্তর : অন্তঃপুরবাসিনী হিসেবে জীবন শুরু করেন।

উত্তর : সামাজিক সীমাবদ্ধতার বেড়াজাল।

উত্তর : রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

উত্তর : অবরোধ বাসিনীদের।


উত্তর :

‘অবরোধ প্রথা’ বলতে নারীদের জন্য বিশেষ রক্ষুশীল নিয়মকে বোঝায়।

উনিশ শতকে নারীদের প্রতি পর্দাপ্রথার নামে জুলুম চালানো হতো। তাদের কণ্ঠস্বর পর্যন্ত পুরুষদের কানে পৌছানো নিষেধ ছিল। তাদেরকে সারাক্ষু চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হতো। অন্তঃপুরে লোকচক্ষুর আড়ালে মেয়েদের আটক রাখার নির্মম প্রথাকেই বলা হতো ‘অবরোধ প্রথা’।



উত্তর : কম ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের কাছে বেশি কিছু আশা করাকে সুকুমারী গোলাপ-লতিকায় কাঁঠাল ফলানোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

যাকে কোনোকালে বীরত্বসূচক শিক্ষা দেওয়া হয়নি তার কাছে যদি বীরত্বপূর্ণ কাজ আশা করা হয় তাহলে তা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষকে ব্যায়ামের মাধ্যমে সুঠাম ও হৃষ্টপুষ্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে প্রথম থেকেই তা করতে হবে। শরীরকে ভালো রাখতে চাইলে নারী-পুরুষ উভয়েরই ব্যায়াম করা আবশ্যক। আমাদের দেশে অনেক অভিভাবক আছেন যারা পরিবারের সবাইকে ব্যায়াম না করিয়ে হঠাৎ কোনো ছেলেকে পালোয়ান হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তাদের এই চাওয়াকেই প্রাবন্ধিক ব্যঙ্গ করে সুকুমারী গোলাপ-লতিকায় কাঁঠার ফলানোর সঙ্গে তুলনা করেছেন।





উত্তর : সমাজে নারীর অধঃপতিত দশা থেকে মুক্তির জন্য প্রথমে তাদের হীনদশার স্বরূপ উন্মোচন জরুরি- এই প্রসঙ্গটিই আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।
কোনো রোগীর চিকিৎসা করার আগে ডাক্তার রোগীর কাছ থেকে রোগের অবস্থা জেনে নেন। কারণ রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে ভুল চিকিৎসার ফলে রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নারীদের মুক্তির উপায় নির্দেশ করার আগে তাই ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের লেখিকা সমাজে তাদের প্রকৃত অবস্থান অনুধাবনের গুরুত্ব প্রকাশ করেছেন এই উক্তিটির মাধ্যমে।


উত্তর : ‘অবরোধ প্রথা’ বলতে মেয়েদের লোকচক্ষুর আড়ালে অন্তঃপুরে আটকে রাখার নিয়মকে বোঝায়।
সমাজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীরা সংসারের গণ্ডিতেই বাঁধা পড়ে থাকে। নারীর স্থান শুধু গৃহে এবং গৃহকর্মই তার জীবনের উদ্দেশ্য, এমন যুক্তি দেখিয়ে সংকীর্ণমনারা নারীকে গৃহে বন্দি থাকতে বাধ্য করে। সুশিক্ষার অভাবে মানসিক দাসত্বের হাত থেকেও তারা মুক্তি পায় না। নারীকে শুধু অন্তঃপুরের শোভা বিবেচনা করে তাদের গৃহকোণে বন্দি করেছে কূপমণ্ডূকেরা। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর এ বন্দিদশাই ‘অবরোধ প্রথা’বলে পরিচিত।


উত্তর : ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে লেখক মানসিক দাসত্ব বলতে মানসিকভাবে নারীদের পরাধীন জীবনযাপন এবং প্রতিবাদ না করে পুরুষের অধীনেই থাকাকে গৌরবজনক মনে করাকে বুঝিয়েছেন। 
‘অর্ধাঙ্গী’প্রবন্ধে নারীর সমস্যার স্বরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নারীর মানসিক দাসত্ব, অশিক্ষা ও অন্ধবিশ্বাসকে। মানসিক দাসত্বের কারণে যুগ যুগ ধরে নারীর অন্তর-বাহির, হৃদয়-মস্তিষ্ক সবই দাসী হয়ে পড়েছে। শিক্ষার অভাবে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় পেছনে পড়ে থাকে তাই অনেকে স্বাধীন উপার্জনক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে স্বামীর দাসীই মনে করে।


উত্তর : এ পর্দা প্রথার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করতেই উল্লিখিত উক্তিটি করেন ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের রচয়িতা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।
‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক দেশ ও জাতির অগ্রগতি ও কল্যাণে নারীকে পর্দার বাইরে এসে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পার্সি মহিলাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পর্দাপ্রথার বিরোধিতায় পার্সি সমাজে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছিল, কিন্তু এজন্য পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়নি।


উত্তর : বিলাতি সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে পার্সি পুরুষগণ তাদের স্ত্রীদের পর্দার বাইরে আনলেও মানসিক দাসত্ব হতে মুক্ত হতে পারেনি নারীরা।
নারীরা মুক্তি ও পর্দাপ্রথা সম্পর্কে নিজের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বেগম রোকেয়া ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে পার্সি নারীদের পর্দামুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন। পার্সি নারীরা তাদের পুরুষদের সহায়তায় পর্দার বন্ধন হতে মুক্ত হলেও তাদের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। অন্তঃপুরের সেই পুরোনো অবস্থানেই থাকার ফলে তাদের মাঝে জীবনীশক্তির কোনো প্রকাশ দেখা যায়নি। অর্থাৎ পর্দাপ্রথার বিলোপে তাদের মানসিক সত্তার কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি।



Score Board

১) বৃষ্টিকণা হয়ে সাগরে পতিত হয়। উপরের বাক্যগুলো দ্বারা বোঝানো হয়েছে-


২) ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে বর্ণিত ‘নাকের দড়ি’ শব্দের অর্থ কী?

৩) ‘অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধে ‘তরঙ্গিনী কী?

৪) এদেশে নারীজাগরণের পথিকৃৎ কে?

৫) ‘ভগিনীদিগকে জানাইয়াছি যে, আমাদের একটা রোগ আছে- `দাসত্ব’- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন কোন রচনার মাধ্যমে এটি জানিয়েছেন?

Score Board

উত্তর :
ক) বলহীনা । প্রবন্ধে নারীসমাজ অর্থে ব্যবহৃত।

খ) ‘অবরোধ প্রথা’ বলতে নারীদের জন্য বিশেষ রক্ষুশীল নিয়মকে বোঝায়।

উনিশ শতকে নারীদের প্রতি পর্দাপ্রথার নামে জুলুম চালানো হতো। তাদের কণ্ঠস্বর পর্যন্ত পুরুষদের কানে পৌছানো নিষেধ ছিল। তাদেরকে সারাক্ষু চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হতো। অন্তঃপুরে লোকচক্ষুর আড়ালে মেয়েদের আটক রাখার নির্মম প্রথাকেই বলা হতো ‘অবরোধ পথা’।


গ) উদ্দীপকের ডুডিথের মায়ের মানসিকতাকে ‘অর্ধাঙ্গী' প্রবন্ধের ‘মানসিক দাসত্বের' সঙ্গে তুলনা করা যায়।

বাহ্যিক প্রকাশে নয়, মনের দিক থেকে প্রচলিত ধ্যানধারণার প্রতি নারীর অবিচল আস্থা । নারী সকে দাস ভাবতে অভ্যস্ত। স্বামী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে ভাবতে গেলেও স্ত্রী রান্নাঘরেই জীবন কাটায়।

উদ্দীপকে ডুডিথের মা তাকে স্কুলে পাঠান না, বই পড়তে দেখলে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেন আর অল্প বয়মাজে স্বাধীন নয়, এর কারণ নারী স্বাধীনভাবে ভাবতে পারে না, সে মানসিকভাবে নিজেসে বিয়ে দিয়ে দেন। কারণ তিনি ডুডিথকে নারী হিসেবে কেবল এসব কাজের উপযুক্ত মনে করেন। তিনি রোকেয়া কথিত মানসিক দাসত্বের শিকার। কারণ রোকেয়া মনে করেন, পার্সি মেয়েরা পুরুষদের নির্দেশনায় পর্দা ছেড়েছিল। এতে তাদের স্বামীর বুদ্ধি-বিবেচনার পরিচয় পাওয়া যায় না। রোকেয়া নারীর পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন নারীর দাসবৃত্তি মানসিকতাকে। ডুডিথের মা নারী হয়েও মানসিক দাসত্বের কারণে মেয়ের সম্ভাবনার দিকটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধে নানাভাবে এই বিষয়টি আলোচনা করেছেন। এই অর্থেই ডুডিথের মায়ের মানসিকতাকে ‘অর্ধাঙ্গী' প্রবন্ধের মানসিক দাসত্বের' সঙ্গে তুলনা করা যায়।


ঘ) “ডুডিথের প্রতিভা বিকাশের অন্তরায়সমূহ ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

নারীরা সমাজে বরাবরই অবহেলিত। সমাজের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয় না। তাদের প্রতি অবমাননাকর আচরণের পেছনে একদিকে যেমন পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা দায়ী, অন্যদিকে তেমনই তাদের দাসত্ব মনোভাবও দায়ী।

‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে রোকেয়া নারীর প্রতি বৈষম্যের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, নারীর জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয় না। ধর্মীয়ভাবে যতটুকু সম্পদ তার পাওয়ার কথা সেগুলোও সে পায় না। উদ্দীপকে দেখা যায়, ডুডিথের প্রতিভা বিকাশে তার পরিবার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ একই প্রতিভার অধিকারী ভাইয়ের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে ডুডিথকে ঘরে কাজ করতে বলা হয়েছে। নারী বলে তার কাজ শুধু ঘর সামলানো।

ডুডিথ বাবা-মায়ের কাছ থেকে তার ভাইয়ের মতো আনুকূল্য পায়নি। তার প্রতিভা বিকাশের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা না করে তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাই ডুডিথের প্রতিভা বিকাশের অন্তরায়। রোকেয়া ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে এ কথাগুলো বলেছেন। এই দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।




উত্তর :

ক) ক্রিস্টোফার কলম্বস প্রসিদ্ধ ইতালীয় নাবিক এবং আমেরিকা মহাদেশের আবিষ্কর্তা।

খ) কম ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের কাছে বেশি কিছু আশা করাকে সুকুমারী গোলাপ-লতিকায় কাঁঠাল ফলানোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

যাকে কোনোকালে বীরত্বসূচক শিক্ষা দেওয়া হয়নি তার কাছে যদি বীরত্বপূর্ণ কাজ আশা করা হয় তাহলে তা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষকে ব্যায়ামের মাধ্যমে সুঠাম ও হৃষ্টপুষ্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে প্রথম থেকেই তা করতে হবে। শরীরকে ভালো রাখতে চাইলে নারী-পুরুষ উভয়েরই ব্যায়াম করা আবশ্যক। আমাদের দেশে অনেক অভিভাবক আছেন যারা পরিবারের সবাইকে ব্যায়াম না করিয়ে হঠাৎ কোনো ছেলেকে পালোয়ান হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তাদের এই চাওয়াকেই প্রাবন্ধিক ব্যঙ্গ করে সুকুমারী গোলাপ-লতিকায় কাঁঠার ফলানোর সঙ্গে তুলনা করেছেন।


গ) যথার্থ শিক্ষার অভাবে উদ্দীপকের ডলির মতো নারীদের মনমানসিকতার যে চিত্র দেখা যায় ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সেই দিকটিরই ইঙ্গিত করেছেন।

প্রকৃত শিক্ষার অভাবে মানুষের মনমানসিকতা বিকশিত হয় না। পুরুষশাসিত সমাজ নারীকে যথার্থ মূল্যায়ন না করে শিক্ষা-দীক্ষা থেকে দূরে রেখে দাসীতে পরিণত করে। স্বামীর হুকুম পালন ও রান্নাবান্নার কাজ করাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। 

উদ্দীপকে দেখা যায়, ডলি বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেনি। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও এখন তার সময় কাটে স্বামীর হুকুম পালন করে এবং রান্নাঘরে রান্নার কাজ করে। তার স্বামী ডাক্তার হলেও তার পরিচয় ‘হাউজ ওয়াইফ'। স্বামীর কথাবার্তায় অংশগ্রহণ করার মতো বুদ্ধি বা ইচ্ছা কোনোটাই তার নেই। পুরুষশাসিত সমাজের অবহেলিত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তার এই মনমানসিকতার দীন অবস্থা। ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারীর যে পশ্চাৎপদ মানসিকতার কথা বলেছেন উদ্দীপকের ডলি তার যথার্থ প্রতিচ্ছবি।


ঘ) উদ্দীপকের ডলির জীবন বিকাশের অন্তরায়। প্রচলিত সমাজব্যবস্থা ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ। 

সমাজব্যবস্থা যখন নারীশিক্ষা তথা নারীর উন্নতির বিরুদ্ধে থাকে তখন নারীজাতি প্রকৃত মূল্যায়ন পায় না। গৃহবন্দি হয়ে পড়ে তারা, পায় না বিকশিত হওয়ার সুযোগ। পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থা তাদের পদে পদে নিগৃহীত করে ।

‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থার উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে নারীরা পদে পদে লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ না দিয়ে পুরুষসমাজ তাদের দাসীর মতো জীবনযাপনে বাধ্য করে। উদ্দীপকেও আমরা দেখতে পাই, ডলি উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ঘরের কাজকর্ম এবং স্বামীর হুকুম পালনেই তার জীবন সীমাবদ্ধ। মেধা থাকা সত্ত্বেও প্রচলিত সমাজব্যবস্থার কারণে সে আজ ভাগ্যবিড়ম্বিত, মর্যাদাহীন এক নারী।

উদ্দীপকে দেখা যায় প্রচলিত সমাজব্যবস্থার কারণে ডলি গৃহকোণে আবদ্ধ হয়ে দিন কাটায়। সমাজ পুরুষকে মূল্যায়ন করায় তার উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। প্রচলিত সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী স্বামীর হুকুম পালন ও সাংসারিক কাজকর্মেই সে আবদ্ধ। ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধেও এ ধরনের সমাজব্যবস্থার কথাই বলা হয়েছে, যা নারীর জীবন বিকাশের অন্তরায়। তাই বলা যায়, ‘অর্ধাঙ্গী' প্রবন্ধে উল্লিখিত সমাজব্যবস্থাই উদ্দীপকের ডলির জীবন বিকাশের অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে।