পদ্মা

পদ্মা

ফর্‌রুখ আহমদ


কবি-পরিচিতি


নাম: ফর্‌রুখ আহমদ।

পিতৃ ও মাতৃপরিচয় : পিতা: সৈয়দ হাতেম আলী।      

মাতা: রওশন আখতার।

জন্ম : ১০ জুন ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ।

জন্মস্থান : মাগুরা জেলার মাঝআইল গ্রামে।

শিক্ষাজীবন : ম্যাট্রিক (১৯৩৭), খুলনা জিল স্কুল। উচ্চতর শিক্ষা অটিশ চার্চ কলেজ, দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য।

উপাধি : মুসলিম রেনেসাঁর কবি / মুসলিম পুনর্জাগরণের কবি / মানবতাবাদী কবি।

বিবাহ : ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে খালাতো বোন সৈয়দ তৈয়বা খাতুন (পিপি) এর সঙ্গে বিয়ে হয়।

পেশা : ১৯৪৮ সালে ঢাকা বেতারে প্রথমে অনিয়মিত ও পরে নিয়মিত ‘স্টাফ রাইটার’ হিসেবে স্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন ১৯৭২ সাল পর্যন্ত।

পুরস্কার : বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ইউনেস্কো পুরস্কার। মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।

শব্দের ব্যবহার : তিনি কবিতায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগে দক্ষতার পরিচয় দেন।

সম্পাদক : ১৯৪৫ সালে ‘মাসিক মোহাম্মদী’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন।

জীবনাবসান : ১৯ অক্টোবর ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের সন্ধ্যায় তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।


সাহিত্যকর্ম:

বিখ্যাত কবিতা :সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪), ‘পাঞ্জেরী’ (১৯৬৫) [কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত]। ‘উপহার

[তিনি নিজের  বিয়ে উপলক্ষে কবিতাটি রচনা করেন, যা ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় অগ্রহায়ণ, ১৩৪৯]।

শিশুতোষ গ্রন্থ:পাখির বাসা’ (১৯৬৫), ‘নতুন লেখা’ (১৯৬৯), ‘হরফের ছড়া’ (১৯৬৮), ‘চাঁদের আসর’, 

                         ‘ছড়ার আসর’, ‘ফুলের জলসা’।

নাটক : ‘আনারকলি’।

কাব্যনাটক: ‘নৌফেল’ ও ‘হাতেম’ (জুন, ১৯৬১)।

কাহিনিকাব্য: ‘হাতেম তা’য়ী’।

সনেট সংকলন: ‘মুহূর্তের কবিতা’।

কাব্যগ্রন্থ: ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪), ‘আজাদ করো পাকিস্তান’ (১৯৪৬), ‘সিরাজাম মুনীরা’, ‘ধোলাই কাব্য’ ‘নতুন 

      লেখা’, ‘কাফেলা’, ‘হাবিদা মরুর কাহিনী’, ‘সিন্দাবাদ’, ‘দিলরুবা’, ‘হে বন্য স্বপ্নেরা’ (১৯৭৬), ‘অনুস্বার’।

ছন্দে ছন্দে কাব্যগ্রন্থ: সিরাজাম মুনীরাদিলরুবার নতুন লেখা বই ধোলাই কাব্য যার প্রধান চরিত্র সিন্দাবাদ। সিন্দাবাদ কাফেলা

সেজে সাত সাগরের মাঝির কাছ থেকে বন্য স্বপ্নের (হে বন্য স্বপ্নেরা) হাবিদা মরুর কাহিনী জানতে পারে।

ছন্দে ছন্দে অন্যান্য গ্রন্থ : নৌফেল হাতেম চাদের আসরে বসে হাতেম তায়ীর জন্য ছড়ার আসরে মুহূর্তের কবিতা রচনা করে। পাখির 

বাসা তার নব বধূর জন্য ফুলের জলসাতে হরফের ছড়া উপহার দেয়।


উৎস পরিচিতি:

পদ্মাফর্‌রুখ আহমদ রচিত আশাব্যঞ্জন এবং উজ্জীবনী ভাবনাবিষয়ক একটি কবিত। ‘পদ্মা’ কবিতাটি র্ফরুখ আহমেদের ‘কাফেলা’ (১৯৮০) নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।




                  অনেক ঘূর্ণিতে ঘুরে 🔒ব্যাখ্যা , পেয়ে ঢের সমুদ্রের স্বাদ🔒ব্যাখ্যা

      জীবনের পথে পথে অভিজ্ঞতা কুড়ায়ে প্রচুর 🔒ব্যাখ্যা

            কেঁপেছে তােমাকে দেখে জলদস্যু- দুরন্ত হার্মাদ 🔒ব্যাখ্যা


   তােমার তরঙ্গভঙ্গে বর্ণ তার হয়েছে পাণ্ডুর 🔒ব্যাখ্যা

       সংগ্রামী মানুষ তবু দুই তীরে চালায়ে লাঙল 🔒ব্যাখ্যা

                    কঠিন শ্রমের ফল- 🔒ব্যাখ্যা শস্য দানা পেয়েছে প্রচুর ; 🔒ব্যাখ্যা


      উর্বর তােমার চরে ফলায়েছে পর্যাপ্ত ফসল ! 🔒ব্যাখ্যা

                জীবন – মৃত্যুর দ্বন্দ্বে নিঃসংশয় , নির্ভীক জওয়ান 🔒ব্যাখ্যা

                 সবুজের সমারােহে 🔒ব্যাখ্যা জীবনের পেয়েছে সম্বল। 🔒ব্যাখ্যা


                বর্ষায় তােমার স্রোতে গেছে ভেসে সাজানাে বাগান, 🔒ব্যাখ্যা

             অসংখ্য জীবন , আর জীবনের অজস্র সম্ভার , 🔒ব্যাখ্যা

হে নদী ! জেগেছে তবু পরিপূর্ণ আহ্বান ,🔒ব্যাখ্যা

                মৃত জড়তার বুকে 🔒ব্যাখ্যা খুলেছে মুক্তির স্বর্ণদ্বার 🔒ব্যাখ্যা

      তােমার সুতীব্র গতি ; তােমার প্রদীপ্ত স্রোতধারা ॥  


মূলভাব

ফররুখ আহমদের ‘পদ্মা’ কবিতাটি ‘কাফেলা; (১৯৮০) নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। ( উল্লেখ্য ‘পদ্মা’ ‘কাফেলা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘পদ্মা’ সনেটগুচ্ছের ৫ সংখ্যক কবিতা/সনেট)। ‘কাফেলা’ কাব্য সাতটি সনেটের সমন্বয়ে রচিত। সংকলনভুক্ত কবিতাটি পাঁচ সংখ্যক সনেট। নদীমাতৃক বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী। এসবের মধ্যে পদ্মা সর্ববৃহৎ। ‘পদ্মা’ কবিতায় এ নদীর দুই রূপ প্রকাশিত হয়েছে। একদিকে এর ভয়ংকর, প্রমত্ত রূপ- যা দেখে বহু সমুদ্র ঘোরার অভিজ্ঞতায়- ঋদ্ধ, দুরন্ত জলদস্যুদের মনেও ভয়ের সঞ্চার হয়। অন্যদিকে, পদ্মার পলিতে প্লাবিত এর দুই পাড়ের উর্বর ভূমি মানুষকে দিয়েছে পর্যাপ্ত ফসল, জীবনদায়িনী সবুজের সমারোহ। আবার, এই পদ্মাই বর্ষাকালে জলস্রোতে স্ফীত হয়ে ভাসিয়ে নেয় মানুষের সাজানো বাগান, ঘর, এমনকি জীবন পর্যন্ত। সেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আবারও প্রাণের স্পন্দন জেগে ওঠে পদ্মাকে ঘিরেই। অর্থাৎ একই পদ্মা কখনও ধ্বংসাত্মক রূপে, কখনও কল্যাণময়ী হয়ে এদেশের জনজীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে।

উত্তর : _


উত্তর : নির্ভীক জওয়ান জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্বে নিঃসংশয়। 

উত্তর : ‘সাত সাগরের মাঝি’ কাব্যটি ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয়। 

উত্তর : জীবিকা অর্জনের উপায়কে সম্বল বলে। 

উত্তর : ‘নৌফেল ও হাতেম’ ফররুখ আহমদের কাব্যনাট্য রচনা।

উত্তর : সংগ্রামী মানুষ কঠিন শ্রমের ফলে প্রচুর শস্যদানা পেয়েছে। 


উত্তর : _


উত্তর : “অনেক ঘূর্ণিতে ঘুরে” বলতে উত্তাল নদী বা সমুদ্রপথে জলদস্যুদের ভ্রমণের বিস্তর অভিজ্ঞতাকে বোঝানো হয়েছে। 
জলদস্যুরা নদী বা সমুদ্রপথে ডাকাতি করে থাকে। এ কারণে অগাধ জলরাশিই তাদের বিচরণের প্রধান স্থান। নদী ও সমুদ্রে তাদের উত্তাল, ঝঞ্চামুখর স্রোতের মুখোমুখি হতে হয়। এ বিষয়টিকে তুলে ধরতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।


উত্তর : “পেয়ে ঢের সমুদ্রের স্বাদ” বলতে এখানে সমুদ্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। 
জলদস্যুরা বহু নদী ও সমুদ্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। তারা নদী ও সমুদ্রপথে প্রতিনিয়ত ওত পেতে থাকে দস্যুবৃত্তির জন্য। নদী আর সমুদ্রই তাদের বিচরণের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। পেশাগত প্রয়োজনে বহু নদ-নদী ও সমুদ্র ভ্রমণ তাদের জন্য অনিবার্য। আলোচ্য পঙ্ক্তিটিতে এ দিকটিই উঠে এসেছে। 


উত্তর : “জীবনের পথে পথে অভিজ্ঞতা কুড়ায়ে প্রচুর” বলতে এখানে জলদস্যুদের বহু নদী ও সমুদ্র পরিভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে।
জলদস্যুরা পেশাগত কারণে নদী আর সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়।  দস্যুবৃত্তির জন্য সমুদ্রের ঢেউ কিংবা নদীর স্রোতে তাদের অবগাহন অনিবার্য। কারণ জলপথেই তারা ওত পেতে থাকে শিকারের আশায়। ফলে নদী কিংবা সমুদ্রে ভাসার অভিজ্ঞতা তাদের অগাধ। কিন্তু পদ্মার প্রমত্ত রূপ অভিজ্ঞ জলদস্যুদেরও সন্ত্রস্ত করে। আলোচ্য পঙ্ক্তিটিতে এ দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। 


উত্তর : ‘কেঁপেছে তোমাকে দেখে জলদস্যু-দুরন্ত হার্মাদ’ পঙ্ক্তিটির মধ্যে দিয়ে পদ্মার প্রমত্ত রূপ দেখে অভিজ্ঞ জলদস্যুদের ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার দিকটি ফুটে উঠেছে। 
জলদুস্যরা বিভিন্ন নদী ও সমুদ্রে ঘুরে বেড়ায়। বহু ঢেউ, বহু ঘূর্ণি দেখে তারা অভ্যস্ত। যেহেতু জলে ভেসে ডাকাতি কারাই তাদের পেশা, তাই এক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। কিন্তু পদ্মার ভয়ংকর মূর্তি দেখে এ অভিজ্ঞ জলদস্যুরাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। উপর্যুক্ত পঙ্ক্তিটিতে এ দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে। 


উত্তর : জলদস্যুরা বহু নদনদী ও সমুদ্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। জল থেকে জলান্তে তাদের প্রতিনিয়ত ছুটে বেড়াতে হয়, কারণ জলদস্যুতাই তাদের নেশা ও পেশা। কিন্তু এ অভিজ্ঞ জলদস্যুরাও পদ্মার ভয়াল ঘূর্ণি দেখে কেঁপে ওঠে। কারণ পদ্মার গতিবেগ ও তীব্র ঘূর্ণি অন্য নদীর চেয়ে একেবারেই আলাদা। এতটাই ভয়ংকার তার ঘূর্ণি যে, ভয় ডরহীন জলদস্যুদের বুকেও সে কম্পন তৈরি করতে সক্ষম। 


Score Board

১) এই কবিতা থেকে এখনও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোনো প্রশ্ন হয়নি।


Score Board

১) পদ্মাকে দেখে কেঁপে উঠেছে- 

২) 'জীবনের পথে পথে অভিজ্ঞতা কুড়ায়ে প্রচুর'- কাদের কথা বলা হয়েছে? 

৩) ফর্ রুখ   আহমদ কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন? 

৪) ফর্ রুখ   আহমদ কোথায় চাকরি করতেন? 

৫) ঢাকা বেতারে ফর্ রুখ   আহমদ কী হিসেবে কাজ করতেন? 

Score Board

উত্তর : _